খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  নরসিংদীতে বাস চাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
  রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি-ধর্ষণের ঘটনায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা

আমদানিতে রেকর্ড তবুও অস্থির সয়াবিন তেলের বাজার

গেজেট ডেস্ক

নভেম্বর থেকে জানুয়ারি– এই তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নেমেছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন। এটি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৯ শতাংশ বেশি। এ তথ্য খোদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। এবার সয়াবিন বীজের আমদানিও ছাড়িয়েছে রেকর্ড।

গত জানুয়ারিতে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে ৩ লাখ টন। এক মাসে এত বেশি সয়াবিন বীজ আমদানি হয়নি আগে কখনোই। আমদানির এই হিসাব-কিতাবের সঙ্গে বাজার পরিস্থিতির যোজন যোজন দূরত্ব। চট্টগ্রামের পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জেই মিলছে না চাহিদার অর্ধেক ভোজ্যতেল।

শুধু খাতুনগঞ্জ নয়, বোতলজাত সয়াবিন নিয়ে পুরো চট্টগ্রামে এমন সংকট চলছে চার মাসেরও বেশি সময়। তবে সমস্যা সমাধানে নেই কোনো উদ্যোগ।

মিল মালিকরা বলছেন, তারা সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছেন। আর পাইকাররা বলছেন, তারা চাহিদার অর্ধেক সয়াবিনও পাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন আট ব্যবসায়ী। তারা পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখলে বাজারে সংকট তৈরি হতো না।

গত নভেম্বরে এ সংকট তীব্র হলে সরকার সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক-কর কমায়। তবু সংকট না কাটায় গত ৯ ডিসেম্বর সরকার সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ায়। তাতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হয় ১৭৫ টাকা। এখন এর চেয়ে বাড়তি দাম দিয়েও বোতলজাত সয়াবিন পাচ্ছেন না খুচরা ক্রেতারা।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাব বলছে, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২২ লাখ টন। এর বড় অংশই আমদানি করতে হয়। দেশীয় বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল ও বীজ আমদানি করে তা থেকে তেল উৎপাদন করে বাজারে ছাড়ে। ভোজ্যতেলের বাজারে আটটির মতো আমদানি, পরিশোধন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সক্রিয়। বাজারও নিয়ন্ত্রণ করে তারা।

যা বলছেন মিল মালিকরা

বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট দূর করে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ৯ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি দুই দফা ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। প্রথম বৈঠকে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বাজারে ভোজ্যতেলের কোনো সংকট নেই বলে জানান। তারা দাবি করেন, আগের চেয়ে এখন বাজারে সরবরাহ বেশি আছে।

সিটি গ্রুপের এক পরিচালক এ ব্যাপারে কথা বলতের অস্বীকৃতি জানালেও সেই বৈঠকে সিটি গ্রুপেরই উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সিটি গ্রুপ গত জানুয়ারিতে ৫০ হাজার ৭০০ টন তেল সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে ২২ হাজার ২৪২ টন বোতলজাত। গত বছরের একই সময় (জানুয়ারি ২০২৪) তারা ১৪ হাজার ২৬২ টন বোতলজাত তেল সরবরাহ করেছিল।

টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিম ওই সভায় জানান, টিকে গ্রুপ আগের বছরের চেয়ে বোতলজাত তেলের সরবরাহ ২৪ শতাংশ বাড়িয়েছে। গত জানুয়ারিতে ১১ হাজার ৮১০ টন তেল সরবরাহ দিয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৯ হাজার ৫০০ টন।

কথার সঙ্গে মিল নেই বাস্তবতার

মিল মালিকদের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতুনগঞ্জের শীর্ষ এক ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা এখন চাহিদার অর্ধেক পণ্যও পাচ্ছি না। গণমাধ্যমে বক্তব্য দিলে যা তেল পেতাম, সেটাও হয়তো আর পাব না।’

খাতুনগঞ্জের তেল বিক্রেতা মোহাম্মদ সোলায়মান জানান, বাজারে বোতলজাত কোনো সয়াবিন তেল নেই। ডিলাররা চাহিদার অর্ধেক তেলও সরবরাহ দিচ্ছে না। ৫ লিটারের বোতলে দাম ৮৫২ টাকা লেখা। এখন ১০০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে সেটা।

বন্দর দিয়ে চার গুণ বেশি আমদানি জানুয়ারিতে

গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে এই জানুয়ারিতে প্রায় চার গুণ সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রর উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম।

১৫ দোকান ঘুরে সয়াবিন মিলেছে চারটিতে

অথচ দাম কমেছে বিশ্ববাজারে

বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম আগের চেয়ে অনেক কমছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, জানুয়ারিতে প্রতি টন সয়াবিন তেলের গড় দাম ছিল ১ হাজার ৬১ ডলার, যা গত নভেম্বরের চেয়ে ১০০ ডলারের মতো কম। অথচ বাংলাদেশে এই পণ্যের দাম বাড়ছে। বোতলজাত তেল না থাকায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম এক সপ্তাহে লিটারপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এখন খোলা সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৮০ থেকে ১৮২ টাকা।

 

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!